জীবনের অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটির প্রয়োগ ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তনের সূচনা করেছে। যেকোনো ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে কম সময়ে এবং কম খরচে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা এবং দ্রুততম সময়ে তা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া। পণ্যের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যবস্থাপনা, তাদের দক্ষতার মান উন্নয়ন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বিপণন এবং সবশেষে পণ্য বা সেবার বিনিময় মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
সাধারণভাবে আইসিটি প্রয়োগের ফলে ব্যবসায় নানাবিধ সুবিধা অর্জিত হয়। এছাড়া আইসিটি খরচ কমাতে সাহায্য করে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কম সময়ে অধিক কাজ করা যায়। ফলে ব্যবসার খরচ হ্রাস পায় । এতে ব্যবসায়ী একদিকে কম খরচে তার পণ্য বিক্রয় করতে পারে, অন্যদিকে মুনাফাও বাড়াতে পারে। খরচ কমানোর অনেকগুলো উপায় রয়েছে।
(১) মজুদ নিয়ন্ত্রণ : ব্যবসার একটি বড় খরচ হলো পণ্যের মজুদ। বাজার চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে মজুদ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বিশেষায়িত সফটওয়্যার কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মজুদের হালনাগাদ তথ্য জানা যায় । ফলে সেই অনুযায়ী উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়।
(২) উৎপাদন ব্যবস্থাপনা : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব। উৎপাদন স্বয়ংক্রিয়করণসহ আইসিটি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে কম সময়ে অধিক উৎপাদন করা যায়। তখন উৎপাদন খরচ হ্রাস পায়। তাছাড়া কর্মী ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ উৎপাদনে গতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়।
(৩) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রধান প্রধান উপকরণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকরী করে তুলেছে।
> মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ফলে চলতে ফিরতে কিংবা ঘরে বসেও ব্যবসা যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। মোবাইল ফোনের কনফারেন্স সুবিধার মাধ্যমে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা যায় এমনকি ছবিও দেখা যায় ৷ ফলে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা যায়৷
> ফ্যাক্স : ফ্যাক্সের মাধ্যমে জরুরি লিখিত তথ্য ও ছবি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেরণ করা যায়। যে সব দেশে ব্যবসার লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার স্বাক্ষরের প্রয়োজন, সেখানে ফ্যাক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
> ইমেইল : ই-মেইল ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে লিখিত যোগাযোগ করা যায়। এমনকি পণ্যের ছবি ক্রেতার কাছে পাঠানো যায়। পণ্য সম্পর্কে অন্য কোনো ক্রেতার মূল্যায়ন যদি ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়ে থাকে, তাহলে সেটির লিংকও পাঠানো যায়।
> ইন্টারনেট : ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্যসেবার খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
> ইন্ট্রানেট অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দক্ষর ভৌগলিকভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সংস্থাপিত ইন্টানেট ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করছে।
(৪) সঠিক হিসাব রাখা : ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাধারণ স্প্রেডশিট ব্যবহার করেই তাদের ব্যবসার হিসাব সংরক্ষণ করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেস সফটওয়্যার ব্যবহার করে পণ্যের মজুদ, কর্মীদের তথ্যাবলি, এমনকি গ্রাহকদের তথ্যাবলিও সংরক্ষণ করা যায়। এই তথ্যাদির কৌশলী প্রয়োগ ভবিষ্যতে ব্যবসার উন্নতিতে ব্যবহার করা যায়।
(৫) বিপণন : ব্যবসা করতে হলে পণ্য বা সেবার বিপশন ও প্রচারে আইসিটি প্রয়োগের ফলে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব হয়েছে।
> বাজার বিশ্লেষণ : যেকোনো নতুন পণ্য বা সেবা বাজারে চালু করার পূর্বে এ বিষয়ে বর্তমান বাচ্ছার সম্পর্ক জানা প্রয়োজন। আইসিটির মাধ্যমে নতুন পণ্যের চাহিদা, যোগান ও দামের সম্পর্ক দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা যায়।
> প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে তথ্য সব প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে সহজে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
সরবরাহ : জিপিএস বা অনুরূপ ব্যবস্থাদির মাধ্যমে কম খরচে পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করা যায়।
> প্রচার: শুয়বেসাইট, ব্লগ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে এবং কখনো কখনো বিনামূল্যে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।
(ঙ) বিক্রয় ব্যবস্থাপসা ও হিসাব : ইলেক্ট্রনিক পয়েন্ট অব সেল (EPOS) হলো এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বিক্রয়ের সকল তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এতে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের সুযোগ থাকে।
(৭) মূল্য সংক্ষত্র : আইসিটি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্যের মূল্য সরাসরি নিজের ব্যাংক হিসাবে সংগ্রহ করতে পারে। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিক্রেতা তার পণ্য বা সেবার মূল্য কেতার হিসাব থেকে সরাসরি নিজের হিসাবে স্থানান্তর করতে পারে।
উপর্যুক্ত উপায়গুলো ছাড়াও আইসিটির প্রয়োগ নানাভাবে ব্যবসাকে সহায়তা করে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রেও আইসিটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
দলগত কাজ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবসায় ভবিষ্যতে আর কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে বলে তোমাদের মনে হয়। দলে বসে একটি তালিকা তৈরি কর ও উপস্থাপন কর।
নতুন শিখলাম : কর্মী ব্যবস্থাপনা, লিংক, বিপণন, ব্লগ, ইলেক্ট্রনিক পরেন্ট অব সেল (EPOS)